ঘুর্নিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাগেরহাটে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি
বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
সুপার সাইক্লোন "আম্পান"এর আঘাতে বিধস্ত প্রায় উপকূল জেলা বাগেরহাট। সুপার সাইক্লোনের সাথে সুন্দরবনের সম্মুখ লড়াইয়ের পরও তীব্র ক্ষতির মুখে আছে জেলাটি। ভেঙ্গে পড়েছে বেড়িবাধ, তলিয়ে গেছে অনেক লোকালয়। নোনাপানিতে সয়লাভ হয়ে গেছে অনেক স্থান।এ পর্যন্ত প্রায় ৪৬৩৫ টি মৎসঘের ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে বলে জানা যায়।
বাগেরহাট জেলার আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমান হিসেবে জানা গেছে মোট দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়ন ৭৫টি ও পৌরসভা ০৩টি ক্ষয়ক্ষতি (বিধস্ততার) সম্মুখিন হয়েছে ৫৩৩১ জন মানুষ। ( ৪৬৩৫ টি ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ঘের বিবেচনায়) বাড়ি-ঘর আংশিক ভাবে বিধস্ত হয়েছে ৪৩৪৯টি এবং সম্পূর্ন ভাবে বিধস্ত হয়েছে ৩৪৭ টি। তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন কতৃপক্ষ।
বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলায বেড়িবাধ নড়বড়ে অবস্থায়। লোকালয়ে পানি প্রবেশ আশঙ্কা। ক্ষতির সম্মুখিন চিংড়ি ও মৎসচাষীরা।
ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলে গেছে, অনেকেই বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হবে বলে তারা আশঙ্কা করছে, তাদের ঘেরের মাছ হয়তো পানির চাপে বের হয়ে গেছে।চিংড়ি চাষিরা জানায় সাধারনত গলদা চিংড়ি উজানে বা স্রোতের বিপরিত দিকে চলে বেশি পানির খোজে, তাই আশঙ্কা করছে ঘেরে চিংড়ি থাকবে না।
একই চিত্র দেখা গেছে বাগেরহাট সদর উপজেলার বৈটপুর গ্রামে। পানিতে প্লাবিত হয়ে ঘরে ডুকে যাওয়ার মত অবস্থা।গোটাপাড়া ইউনিয়নের আলুকদিয়া গ্রামের মৎস ও মুরগী চাষী ফিরোজুল ইসলামের চিংড়ি খামার ও মুরগী খামার পানিতে তলিয়ে ২ হাজার মুরগী মারা গেছে। সর্বস্বো হারিয়ে মাথায় হাত উঠে গেছে তার। সদরের দড়িতাল্লুকে আম্পানের তান্ডবে ঘর হারিয়ে ২ সন্তানকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে আছে রাবেয়া নামের একনারী।শেষ সম্বল ঝুপড়ি ঘরটিও ধ্বংস করে গেল সর্বনেশে আম্পান।
পানির চাপে চাঁপাতলা গুচ্ছগ্রামের একমাত্র যাতায়াত রাস্তার ২জায়গা ধ্বসে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে গেছে গুচ্ছগ্রামের ৭০ টি পরিবার। টিউবওয়েলর গোড়ার প্লাস্টার ধসে পড়ে যে কোন সময় অকেজ হযে যেতে পারে একমাত্র নিরাপদ পানির উৎসটি।
ভুক্তভোগীদের দাবি, এই চরম সংকটময় অবস্থায় তাদের ঘরে রান্না হবে না, না খেয়েই হয়তো দিন পার করতে হবে।
সদরের মুনিগঞ্জ -গোপালকাঠি এলকায় ও বেড়িবাধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে বলে জানা যায়।ভেঙ্গে পড়েছে মেইন রাস্তা। মাঝিডাঙ্গা বস্তিতে আটকা পড়েছে ১০০টি পরিবার।
এদিকে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকায় বেড়িবাধ ভেঙ্গে গেছে জনগনের চলাচল বন্ধপ্রায়।
ধ্বংসস্তুপে রুপ নিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে মোংলায় লন্ডভন্ড বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বুধবার (২০ মে) সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোংলায় আঘাত হানলে ভেঙে যায় মোংলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের আমড়াতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাসুদেব কুমার বলেন- ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যালয়টি একবারে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে আসবাবপত্র, যার ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক প্রায় ৪ লক্ষ্য টাকা।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের একেবারে তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে মোংলা প্রি ক্যাডেট স্কুল।
মোংলায় বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়।
এছাড়াও বাগেরহাটের মুটামুটি সব উপজেলাতেই কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এক নজরে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বাগেরহাট জেলার আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণঃ
১। দূর্গত মানুষঃ ৫৩৩১ জন
২ বিধ্বস্ত বাড়ি-ঘরঃ ক)আংশিকঃ ৪৩৪৯টি
খ) সম্পূর্ণঃ ৩৪৭ টি
৩। আহতঃ ১ জন ( চিকিৎসাধীন)
৪। নিহত ঃ নাই
৫। ক্ষতিগ্রস্ত ঘেরঃ ৪৬৩৫ টি
কোন মন্তব্য নেই